বহু আকাঙ্খিত অনসাইটের অফারটা উপেক্ষা করতে না পারায় বিয়ের এক বছরের মধ্যেই দুই ভিন্ন মহাদেশের বাসিন্দা হয়ে যাওয়া রিয়া আর অয়ন আবার কাছাকাছি আসে অগমেন্টেড রিয়ালিটির দয়ায়।
ওদের দুজনের মাঝখানে এখন শুধু একটিমাত্র দেওয়াল , যে দেওয়ালে "হাই জিনি " বলে একে অপরের হাতের ওপর হাত রাখতেই কেঁদে ফেলে ওরা দুজন।
পাঁচ বছরের প্রেমের পর পরিবারের অমতে বিয়ে আর তার মাত্র এক বছরের মাথায় এই এক মহাসাগর দূরত্বটা অসহ্য হয়ে উঠেছিল যেন।
তাই একে অপরের কাছাকাছি আসতে ওদের নতুন ফ্ল্যাট এর জন্য বিয়ের আগে থেকে জমানো টাকাটা দিয়ে দুজনেই বাজারে নতুন আসা এই ১৯৮ইঞ্চির ডিজিটাল ওয়ালটি কিনে ফেলে।
এখন ঘুম থেকে ওঠা থেকে রাতে শুতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত যতটা সময় ওরা বাড়িতে থাকে সবটাই একে অপরের নজরবন্দী।
সাতমাস পর
আজ সারাদিন দুজনের জিনি অর্থাৎ ডিজিটাল ওয়ালই সুইচড অফ।
সারাক্ষন চোখের সামনে থাকলে অনেক সময় আলাদা করে একে অপরের সাথে সময় কাটানোর তাগিদটা অনুভব করা যায়না ,আর তার সাথে দুজন দুই টাইম জোনে থাকায় ,প্রথম দিকে অয়নের চায়ের কাপ হাতে "গুড মর্নিং জিনি " বলতেই সারাদিনের অফিসের ধকল ছাঁপিয়েও দেয়াল জুড়ে অয়নকে দেখার আনন্দে রিয়ার মুখে যে সতেজ হাসি ফুটে উঠতো সেটা সময়ের সাথে মিলিয়ে যেতে থাকে।
নিজের মানুষদের সাথে আবার অভিনয় করাটাও বিলাসিতার মতো লাগে। অভিমান জমতে দেওয়া আর তা হজম করে নেওয়ার একটা বদভ্যেস তৈরী হয়ে যায় খুব তাড়াতাড়ি।
তাই কাল যখন রিয়ার জ্বরের কথা শুনে ওর একমাত্র ভারতীয় কলিগ শ্রীনি ওর সাথে দেখা করতে এসে সোজা রিয়ার বেডরুমে চলে যায় সেটা মেনে নিতে অয়নের যতটা কষ্ট হয় তার চেয়ে বেশি কষ্ট হয় জ্বরের কথা রিয়ার অয়নকে না জানানোটা।
রিয়ার যুক্তিও বৈধ। চোখের এতো কাছে থাকা সত্বেও রিয়ার মুখের অসুস্থতার ছাপ ,বারবার হাঁচি কাশি ,রাতের খাবার না খাওয়া এসব যখন অয়নের আর আজকাল চোখে পড়েনা তখন ওই বা কেন যেচে বলতে যাবে ওর জ্বরের কথা।
যে প্রোমোশনের জন্য অয়ন গত সাতমাসে একটাও বড় ছুটি নেবেনা বলে রিয়ার কাছে যাবার ওর হাজারো আবদার উপেক্ষা করেছে সেই প্রোমোশনের লেটারটা পেয়ে অয়ন অপেক্ষা করে কখন বাড়ি গিয়ে নিজে মুখে খবরটা দিয়ে সামনাসামনি রিয়ার এক্সপ্রেশন দেখবে।
প্রমোশন লেটারের এক কপি প্রিন্ট নিয়ে বিরাট স্ক্রিনটার সামনে দাঁড়িয়ে "হাই জিনি " বলতেই স্ক্রিনটা অন হয়ে গেলো। কিন্তু প্রতিবার "কানেক্ট মি টু রিয়া " বলতে জিনির যান্ত্রিক স্বরে বারবার "সরি আয়ান ,রিয়া ইস নট এভেইল্যাবেল নাউ " শুনতে শুনতে অয়নের উচ্ছাস নিভে যায়।
অয়নের প্রোমোশনের খবরটা রিয়া আর অয়নের কমন ফ্রেন্ড কাম কলিগ অন্তরা সকালেই দিয়েছিলো রিয়াকে হোয়াটস্যাপে।
রিয়া সারারাত অপেক্ষা করেছিল অয়নের ফোনের। ভোরবেলা শুতে যাওয়ার আগে শেষবারের মতো একবার জিনিকে অন করে দেখেছিলো অয়ন বাড়ি এসেছে কিনা।
সেদিন আরো একবার ওরা দুজন দুজনের হাতের ওপর হাত রেখে কেঁদেছিলো।শুধু একরাশ অভিমানে "হাই জিনি " টুকু বলা হয়ে ওঠেনি কারোর ই।
--------------------------------------------------